শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৩১ পূর্বাহ্ন

নীতিমালার বাইরে কোচিং নয়: হাইকোর্ট

তরফ নিউজ ডেস্ক: শিক্ষা ব্যবস্থায় ‘কোচিং’ বন্ধে তৈরি করা নীতিমালা বৈধ বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। এর ফলে নীতিমালার বাইরে গিয়ে এখন আর কেউ কোচিং করাতে পারবে না বলে জানিয়েছেন শুনানিতে অংশ নেওয়া আইনজীবীরা।

বৃহস্পতিবার (৭ ফেব্রুয়ারি) কোচিং বাণিজ্য বন্ধের নীতিমালা ও কোচিং বাণিজ্যের সাথে জড়িত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রশ্নে জারি করা রুলের শুনানি শেষ  বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।

আদালতে শুনানিতে দুুদকের পক্ষে  ছিলেন আইনজীবী  খুরশীদ আলম খান ও রিটকারীর পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম। এ মামলায় অ্যামিকাস কিউরি ছিলেন ফিদা এম কামাল।

এর আগে, কোচিং বাণিজ্যের অভিযোগে মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না সে জন্য সরকার গত বছর কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়।

দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে এ নোটিশ দেয় সরকার। এসব নোটিশ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধের নীতিমালা-২০১২ নিয়ে শিক্ষকরা হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন।

গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি ওই চিঠির কার্যকারিতা চার মাসের জন্য স্থগিত কররার পাশাপাশি রুল জারি করেন আদালত।

ওই আদেশের বিরুদ্ধে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করার অনুমতি চেয়ে লিভ টু আপিল দায়ের করেন। গত বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি ওই আবেদনের ওপর শুনানি শেষে  গত ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফের নেতৃত্বাধীন হাই কোর্ট বেঞ্চকে এ রুলের নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ।

পরে আদালত এ রুল নিষ্পত্তির জন্য সাবেক দুই অ্যাটর্নি জেনারেল হাসান আরিফ ও ফিদা এম কামালকে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে নিয়োগ দেন।

এর আগে, ২০১২ সালের ২০ জুন কোচিং কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা-২০১২ জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রণীত ওই নীতিমালায় বলা হয়, স্কুল চলাকালীন কোনো শিক্ষক কোচিং করাতে পারবেন না। তবে স্কুলের আগে বা পরের কোনো সময়ে অভিভাবকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠান প্রধান অতিরিক্ত ক্লাসের ব্যবস্থা করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে উপজেলা পর্যায়ে ১৫০ টাকা, জেলা শহরে ২০০ টাকা ও মেট্রোপলিটন এলাকায় ৩০০ টাকা এবং যেকোনো ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১২শ টাকা পর্যন্ত ফি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। একটি বিষয়ে মাসে সর্বনিম্ন ১২টি ক্লাস অনুষ্ঠিত হতে হবে এবং কোনো ক্লাসে ৪০ জনের বেশি শিক্ষার্থী থাকবে না।

নীতিমালায় আরও বলা হয়, কোনো শিক্ষক তার নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষার্থীকে কোচিং করাতে পারবেন না। তবে প্রতিষ্ঠান প্রধানের অনুমতি নিয়ে সর্বোচ্চ ১০ জনের ব্যাচে শিক্ষার্থী পড়ানো যাবে। সে ক্ষেত্রেও প্রতিষ্ঠান প্রধানকে লিখিতভাবে শিক্ষার্থীদের তালিকা জানাতে হবে। শুধু তাই নয়, কোনো শিক্ষক বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গড়ে ওঠা কোনো কোচিং সেন্টারে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত থাকতে পারবেন না এবং কোনো কোচিং সেন্টারের মালিক হতে পারবেন না।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটিকেও কোচিং বাণিজ্য রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে বলা হয় ওই নীতিমালায়। পাশাপাশি প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অতিরিক্ত বিভাগী কমিশনার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে কোচিং বাণিজ্য বন্ধে মনিটরিং কমিটি গঠনেরও নির্দেশনা দেওয়া হয়।

এসব নীতিমালা না মানলে শিক্ষকের এমপিও স্থগিত, বাতিল, বেতন-ভাতা স্থগিত, বেতনের ধাপ অবনমতিকরণ, সাময়িক বা চূড়ান্ত বরখাস্ত বা নন-এমপিও শিক্ষকদের ক্ষেত্রে বেতন-ভাতা স্থগিত, বেতনের ধাপ অবনমতিকরণ, সাময়িক বা চূড়ান্ত বরখাস্তের শাস্তির বিধান রাখা হয় ওই নীতিমালায়। আর নীতিমালা ভঙ্গকারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থা না নিলে পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়াসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অধিভুক্তি বাতিল করার এখতিয়ারও রাখা হয়।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

ওয়েবসাইটের কোন কনটেন্ট অনুমতি ব্যতিত কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Design & Developed BY ThemesBazar.Com